যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন--হে জনার্দন! চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপা করে আমাকে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ
বললেন-- হে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির! আপনি ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন করেছেন। এই একাদশী সকল সুখের
আধার, সিদ্ধি প্রদানকারী ও পরম মঙ্গলময়। সমস্ত
পাপ থেকে নিস্তার বা মোচন করে বলে এই পবিত্র একাদশী তিথি 'পাপমোচনী' নামে প্রসিদ্ধ।
জীবকূলের কল্যানার্থে রাজা মান্ধাতা একবার লোমশ মুনিকে এই একাদশীর কথা জিজ্ঞাসা ও বর্ননা
করার অনুরোধ করেছিলেন। লোমশ মুনির বর্ণিত সেই বিচিত্র উপাখ্যানটি আপনার কাছে বলছি।
আপনি মনযোগ দিয়ে তা শ্রবন করুন।
প্রাচীনকালে অতি মনোরম 'চৈত্ররথ'
পুষ্প উদ্যানে বসন্তকালে স্বর্গের গন্ধর্ব,
কিন্নর , অপ্সরাগন ঘুরতে আসে। সে উদ্যানে মুনিগন
বহু বছর ধরে তপস্যা করতেন। সে সময় চ্যবন মুনির পুত্র মেধাবী সেখানে তপস্যা করতেন। মঞ্জুঘোষা
নামে এক সুন্দরী অপ্সরা তাঁকে বশীভূত করতে চাইলো। কিন্তু ঋষি কুমারের অভিশাপের ভয়ে
সে আশ্রমের দুই মাইল দূরে অবস্থান করতে লাগল
এবং তার কুটিরে বীণা বাজিয়ে মধুর স্বরে সে গান করত। এই দিকে কামদেব সব লক্ষ্য করে মেধাবী
ঋষি কুমারকে বশীভূত করার পরিকল্পনা করেন। তিনি
মঞ্জুঘোষাকে সাথে করে ঋষি কুমারের আশ্রমে যান।
সেখানে মঞ্জুঘোষা মেধাবীকে দেখে কামবাণে পীড়িতা হয়ে পড়ে। এদিকে ঋষি কুমার মেধাবীও অপ্সারার
অনুপম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন। তখন মঞ্জুঘোষা বীণা বাজিয়ে মধুর স্বরে গান করতে
লাগল এবং নানা হাব-ভাব ও কৌশল দ্বারা ঋষি কুমারকে বশীভূত করার চেষ্টা করতে থাকল। কামদেবও
তার কামবান ঋষি কুমারকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করল। কামবান ও অপ্সারার অনুপম সৌন্দর্য,
কৌশলে ক্রমে কামপরবশ ঋষি কুমার তার আরাধ্য দেবকে বিস্মৃত হয়ে সাধন-ভজন বিসর্জন দেন
এবং অপ্সরার সাথে কামক্রীড়ায় লিপ্ত হন।এইভাবে কামক্রীড়ায় বহুবছর অতিক্রান্ত হলে সেই
অপ্সরা দেবলোকে ফিরে যেতে মনস্থ করল।
এইজন্য মঞ্জুঘোষা মেধাবী ঋষি
কুমারকে গিয়ে বলল-- হে প্রভু , নিজ গৃহে ফিরে যাবার আমাকে অনুমতি প্রদান করুন।
কিন্তু মেধাবী প্রতিউত্তরে বললেন-- হে সুন্দরী! তুমি
মাত্রই আমার কাছে এসেছ, কাল সকাল পর্যন্ত আমার
কাছে থেকে যাও।
মুনির কথা শুনে অভিশাপ ভয়ে
সেই অপ্সরা আরও কয়েক বছর তার সাথে বাস করল। এইভাবে ৫৭ বছর ৯ মাস ৩ দিন অতিক্রান্ত হল।
এই দীর্ঘকাল অপ্সরার সহবাসে থাকলেও মেধাবীর কাছে তা অর্ধরাত্রি বলেই মনে হল। মঞ্জুঘোষা
পুনরায় নিজস্থানে গমনের প্রার্থনা জানালে মুনি বললেন--হে সুন্দরী! আমার সাথে আরও এক
রাত থাক,কাল সকালে তুমি চলে যেও। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি সকাল বন্দনা ও গায়েত্রী মন্ত্র
পাঠ করা না সমাপ্ত করি, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি এখানে থাকো।
মুনির কথা শুনে অপ্সরা ঈষৎ
হেসে তাকে বলল-- হে মুনিবর! আমার সহবাসে আপনার যে কত বছর অতিবাহিত হয়েছে তা
একবার বিচার করে দেখুন।
এই কথা শুনে মুনি স্থির হয়ে
দেখলেন যে, তাঁর সাতান্ন বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। তার তপস্যার ক্ষয়কারিণীর জন্য মুনি
তখন মঞ্জুঘোষার প্রতি ক্রোধ পরবশ হলেন। রাগে ক্ষোভে মুনি তখন অপ্সরাকে অভিশাপ দিলেন
যে-- রে পাপিষ্ঠে, দুরাচারিণী, তপস্যার ক্ষয়কারিণী, তোমাকে ধিক! তুমি পিশাচী হও।
মেধাবীর শাপে অপ্সরার শরীর
বিরূপ প্রাপ্ত হল। তখন সে অবনতমস্তকে মুনির কাছে ক্ষমা চাইলেন। তার সাথে অতিবাহিত সময় স্মনণ করে শাপমোচনের উপায় জিজ্ঞাসা করল।
মেধাবী বললেন-- হে সুন্দরী!
আমি কি করতে পারি।তুমি আমার সব তপস্যার ক্ষয় করে দিয়েছ। তা সত্তেও আমি তোমকে আমার শাপমোচনের
উপায় বলছি। চৈত্রমাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী, সর্বপাপ ক্ষয়কারিণী। সেই ব্রত
পালনে তোমার পিচাশত্ব দূর হবে।
পিতার আশ্রমে ফিরে গিয়ে মেধাবী
বললেন-- হে পিতা! এক অপ্সরার সঙ্গদোষে আমি মহাপাপ করেছি। এর প্রায়শ্চিত্ত কি? তা কৃপা
করে আমাকে বলুন।
উত্তরে চ্যবন মুনি বললেন--
চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে তোমার পাপ দূর হবে। পিতার
উপদেশ শুনে মেধাবী সেই ব্রত ভক্তিভরে পালন করল।
তার সমস্ত পাপ দূর হল। পুনরায়
তিনি তপস্যার ফল লাভ করলেন। মঞ্জুঘোষাও ঐ ব্রত পালনের ফলে পিচাশত্ব থেকে মুক্ত হয়ে
দিব্য দেহে স্বর্গে গমন করল।
হে মহারাজ! যারা এই পাপমোচনী
একাদশী পালন করেন, তাদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপই ক্ষয় হয়। এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণে সহস্র
গোদানের ফল লাভ হয়।
0 comments:
Post a Comment